শচীনকর্তা আমার কাছে কেবলমাত্র রাহুল দেববর্মণের বাবা হয়েই থাকতেন যদি না "সরগমের নিখাদ" বইটি আমার হাতে এসে পড়তো। এই বইয়ের মাধ্যমেই আমি গায়ক, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক শচীন দেববর্মণের স্বতন্ত্র পরিচয়ের কথা জানতে পারি। জানতে পারি সেই মহান শিল্পীর কথা যিনি সঙ্গীতের জন্য রাজপরিবারের উচ্চপদ ত্যাগ করেন।
শচীনকর্তা সাগরময় ঘোষের সাপ্তাহিক "দেশ" পত্রিকায় "সরগমের নিখাদ" আট কিস্তিতে নিজের আত্মকথা বর্ণনা করেন। এই লেখার জন্য শচীনকর্তাকে প্রেরণা যোগান সাগরময় ঘোষের ভাই এবং শচীনকর্তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি সলিল ঘোষ। এই আটটি লেখার সংকলনই হলো এই বইটি। বইয়ে শচীনকর্তার জবানিতে ফুটে উঠে তাঁর শৈশব ও কৈশোর, যৌবন এবং পৌঢ়ত্বের কথা। জানা যায়, প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সিংহাসন হারানো ত্রিপুরার মহারাজ শ্রীনবদ্বীপচন্দ্র দেববর্মণের পুত্র শচীন দেববর্মণের সঙ্গীতের রাজ্যে রাজপুত্র হয়ে উঠার গল্প।
বইটির আকর্ষণীয় দিক হলো, শচীনকর্তার সাবলীল লেখনী। শচীনকর্তার একটি লেখারও ভাষা জটিল মনে হয় নি, কোনো লেখা পড়তে গিয়ে ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটে নি। বইটিতে শচীনকর্তার শেষজীবনেরও উল্লেখ করছেন সংকলক। আরো রয়েছে শচীনকর্তার কিছু দুর্লভ ছবি যা পাঠককে আনন্দ দেবে।
বইটিতে শচীনকর্তার লেখাগুলোর আগে ভূমিকা, মুখবন্ধ ও প্রবেশিকা নামে তিনটি লেখা রয়েছে। এগুলোতে একই কথার পুনরাবৃত্তি রয়েছে যা বিরক্তির উদ্রেক করে। মার্গ সঙ্গীত, কাব্য সঙ্গীতের মতো খটমটে শব্দের জন্য বইটির শেষে নির্ঘণ্ট যোগ করা হলে সাধারণ পাঠকের বইটির রস আস্বাদন করা সহজ হতো। এক্ষেত্রে,বইটি বুঝতে আমাকে সহায়তা করেছে প্রিয় সহপাঠী বখতিয়ার আকিব(যার কণ্ঠে সুরের খেলা আমাকে মুগ্ধ করে) ও শাহনেওয়াজ সাকিব; অসংখ্য ধন্যবাদ তাদের। কুমিল্লার গর্ব শচীনকর্তাকে জানতে চাইলে "সরগমের নিখাদ" পড়া আবশ্যক।একনজরে "সরগমের নিখাদ" :
লেখক : শচীন দেববর্মণ
সংকলক ও সম্পাদক : আবুল আহসান চৌধুরী
প্রচ্ছদ : কাইয়ুম চৌধুরী
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৯৪
মূল্য : ১৫০ টাকা
প্রকাশক : প্রথমা প্রকাশন