যদিও আমার মনের অল্প একটু অংশ বিশ্বাস করে যে আমি আগের চেয়ে অনেক বেশি অলস হয়ে গেছি , তাই এতোদিন ব্লগ লেখতে পারি নি। যাই হোক, এসব বেহুদা কথাবার্তা বাদ দিয়ে কাজের কথায় আসা যাক। এই পোস্টে গত মাসে যে ক'টা বই পড়েছি তাদের সবগুলোর ছোটখাটো রিভিউ লেখবো। আগামী কিছুদিন এভাবেই লেখার ইচ্ছে আছে।
সোভিয়েতস্কি কৌতুকভ
মাসুদ মাহমুদের সোভিয়েতস্কি কৌতুকভ[1] মূলত সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত বিভিন্ন কৌতুকের একটি সংকলন। সোভিয়েত ইউনিয়নে রাষ্ট্রীয়ভাবে নাগরিকদের কথা বলার অধিকারকে দমিয়ে রাখার যে একটা প্রচেষ্টা ছিলো তার বিরুদ্ধে এক প্রকার বিদ্রোহের দলিল এসব কৌতুক। সেসময়ে কৌতুক বলতে হতো গোপনে, আশ্চর্যের বিষয় হলো কৌতুক বলার জন্যও লোকজনকে জেল খাটতে হতো। সে কারণেই হয়তো সোভিয়েত ইউনিয়নের কৌতুকগুলো এতো উচ্চমানের ছিলো! যা হোক, সমাজতন্ত্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাস নিয়ে বেশি জ্ঞান না থাকায় দু-একটা কৌতুকের নিহিত অর্থ বুঝতে পারি নি।
লকডাউনের এই দমবন্ধ সময়ে এই কৌতুকগুলো আপনার মুখে হাসি ফোটাতে পারে। তবে মাথায় রাখবেন, দু একটি কৌতুককে গ্রহণ করতে প্রাপ্তমনস্ক হওয়া প্রয়োজন।
মূল্য | ৭০ টাকা |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | ১১২ |
প্রকাশনী | কিউপিড |
রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেন নি
মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের এই বইটি[2] বোধকরি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবচে বেশি প্রচার পাওয়া বাংলা বইগুলোর মধ্যে একটি। বইটির ব্যতিক্রমী নাম এর পেছনে অন্যতম কারণ। এই অদ্ভুত নাম আর ফেসবুকে কিছু মানুষের ভালো রিভিউ দেখে বইটি পড়তে গিয়েছিলাম এবং হতাশ হয়েছি। প্রেডিক্ট্যাবল কাহিনী, গল্পের মধ্যে দুয়েকটি প্লট হোল - এসব কারণে বইটি ভালো লাগে নি।
মূল্য | ২৪০ টাকা |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | ২৭১ |
প্রকাশনী | বাতিঘর |
থার্টিন রিজনস হোয়াই
![]() |
জে অ্যাসারের (Jay Asher) লেখা থার্টিন রিজনস হোয়াই(Thirteen Reasons Why) [3] উপন্যাসটি আমার পড়া প্রথম ইয়ং এডাল্ট জনরার বই। এই উপন্যাসের ভিত্তিতে নেটফ্লিক্সে একই নামে একটি সিরিজও[4] আছে। এই বই পড়তে গিয়ে উপলদ্ধি হয়েছে যে, ইয়ং এডাল্ট জনরার বইগুলো ইংরেজি বইয়ের নতুন পাঠকদের জন্য বেশ উপযোগী। এই বই মূলত হ্যানা বেকার (Hannah Baker) নামে এক তরুণীর (নাকি কিশোরী!) আত্মহত্যার তেরোটি কারণ নিয়ে লেখা। ক্লে জেনসেন (Clay Jensen) নামের হ্যানার এক সহপাঠী ও হ্যানার আত্নহত্যার আগে রেকর্ড করা সাতটি ক্যাসেটের টেপ - এই দুটো জবানী উপন্যাসের গল্প বর্ণনা করেছে৷ এই ডুয়াল ফার্স্ট পারসন নেরেটিভটা আমার বেশ ভালো এবং নতুন (আমার কূপমন্ডূকতা) লেগেছে। উপন্যাসের কাহিনী বেশ ভালো ছিলো, বেশ আগ্রহ নিয়ে (এবং রাত জেগে) উপন্যাসটি পড়েছি। তবে উপন্যাস শেষে মনে হয়েছে- হ্যানার প্রফেশনাল সাইকিয়াট্রিস্টের প্রয়োজন ছিলো।
উপন্যাসটি আমার ভালো লেগেছে, চাইলে পড়ে দেখতে পারেন। তবে বলে রাখা প্রয়োজন এই বইটি আত্নহত্যাকে মহিমান্বিত করেছে বলে বির্তক রয়েছে; যদিও আমার তা মনে হয় নি।
পৃষ্ঠা সংখ্যা | ২৮৮ |
প্রকাশনী | পেঙ্গুইন |
রাইফেল, রোটি, আওরাত
রাইফেল, রোটি, আওরাত[5] আনোয়ার পাশার লেখা একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস। উপন্যাসটি রচনার সময়কাল ১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাস। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র সুদীপ্ত শাহিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের একজন শিক্ষক। এ উপন্যাসটিতে পঁচিশে মার্চের গণহত্যা এবং পরবর্তীতে বাঙালির প্রতিরোধ সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। "পঁচিশে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের হত্যা করা হয়"- বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পাঠ্যবইয়ে পড়ে আসা এই গৎবাঁধা শব্দগুলো যে কী পরিমাণ নির্মমতা ও ভয়াবহতাকে প্রকাশ করে সেটার একটা ধারণা এই বইটি পড়লে পাওয়া যায়। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটা অংশ যে স্বাধীনতাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িকতার সমর্থক ছিলো, সে বিষয়টি উপন্যাসটিতে দেখা যায়। উপন্যাসের সুদীপ্ত শাহিন যেমন তার নামের জন্য বারবার বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছেন, বাংলাদেশও তার নিজস্ব সংস্কৃতির জন্য পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ও তাদের দোসরদের কাছে হিন্দুয়ানির দোষে দুষ্ট হয়েছে। সুদীপ্ত শাহিনের গল্প মূলত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রেরই গল্প; সুদীপ্ত শাহিনের অন্ধকার রাতের শেষে ভোরের প্রতীক্ষার চিত্র মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য অপেক্ষারই চিত্র।
বাংলা ভাষায় রচিত ঐতিহাসিক উপন্যাসগুলোর মধ্যে রাইফেল, রোটি, আওরাত নিঃসন্দেহে প্রথম সারিতে থাকবে। যদিও বইটিতে পাকিস্তানিদের বর্বরতার কিছু বর্ণনা পড়ে আমার গা শিউরে উঠেছিলো, তারপরও বইটি সকলেরই পড়া উচিত বলে আমি মনে করি।
মূল্য | ২৫০ টাকা |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | ১৮০ |
প্রকাশনী | স্টুডেন্ট ওয়েজ |